আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, যে যাই বলুক আমরা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন করবো। পার্লামেন্টের ওপর কোনো দায়-দায়িত্ব থাকবে না, সব আমাদেরই করে যেতে হবে এটা কোনো বেদবাক্য না। যতটুকু পারা যায় আমরা করে যাবো, সম্ভব হলে সবই করে যাবো, কিন্তু এখানে রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত লাগবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমীতে জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলের মতবিরোধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে প্রভাব পড়বে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান। আসিফ নজরুল বলেন, নির্বাচন হয়ে তৃতীয় উপায় তো আছে, নির্বাচিত সংসদ একটা সংবিধান সংস্কার সভা হিসেবে কাজ করবে। তাদেরও দায়িত্ব আছে। জুলাই সনদের সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক দেখছি না। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
জুলাই সনদ নিয়ে বিরোধ হতাশাজনক, সিদ্ধান্ত দ্রুত হবে: ড. আসিফ নজরুল বলেন, ২৭০ দিন ধরে আলাপ-আলোচনা করে আমরা প্রধান রাজনৈতিক দলের বক্তব্যের মধ্যে যে অনৈক্যের সুর দেখছি এটা হতাশাব্যঞ্জক। এই তীব্র বিরোধের মধ্যে কীভাবে সমঝোতার দলিল পাস হয়, এটা খুব দুরূহ একটা চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে এনে দিয়েছে। আসিফ নজরুল বলেন, কিছু ভাইটাল প্রশ্নে তাদের আসলে ঐকমত্য হয় নাই। এর আগে আমরা জেনেছিলাম, বিষয়বস্তু নিয়ে বিরোধ ছিল। এখন আবার দেখলাম, দুই ধরনের বিরোধ বের হয়েছে। একটা হলো, কী পদ্ধতিতে পাস করা হবে। আরেকটা হচ্ছে, গণভোট কবে হবে। এত দৃঢ়, পরস্পরবিরোধী এবং উত্তেজিত ভূমিকা নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো, যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ছিল। আপনারা যদি এ রকম একটা ভূমিকা নেন তাহলে সরকার কী করবে। আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না, এতদিন আলোচনার পর আপনাদের যদি ঐক্যমত না আসে, তাহলে আমরা সত্যি কী করবো এটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল যদি এককভাবে আমাদের আল্টিমেটাম বা জোর করার ব্যবস্থা করে তার মানে হলো তাদের মধ্যে ঐকমত্য নাই। তারা চাচ্ছেন, যেন এই সরকার তাদের দলীয় অবস্থান সমর্থন করে। দুর্ভাগ্যজনক, আলোচনার জন্য তাদের যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। তারা যে অনৈক্য দেখাচ্ছেন, জুলাইয়ের চেতনাকে কোথায় নিয়ে গেছেন, বিবেচনা করা উচিত। আইন উপদেষ্টা বলেন, ক্যাবিনেটের মিটিংয়ে আজ সাধারণ একটা আলোচনা হয়েছে অনৈক্যের বিষয় নিয়ে। ঐকমত্য কমিশন দুইটা বিকল্প দিয়েছে- একটা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ, গণভোট, ২৭০ দিনের মধ্যে না হলে সয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে। এটা কোনো নজির আছে কিনা বা আদৌ সম্ভব কিনা, আমরা দেখবো। আরেকটা হলো- এই দায়-দায়িত্ব নির্বাচিত সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া। এই দুই বিকল্পের মধ্যে কোনটা আসলে বেশি গ্রহণযোগ্য এটা নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ আছে। তিনি বলেন, গণভোট নিয়ে বিরোধ তো তীব্রতম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এসব বিষয়ে আমাদের একটা সময় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। আমরা তাকে সহায়তা করার জন্য থাকবো। সিদ্ধান্ত নির্দিষ্ট কেউ নেবে না, এটা আপনারা নিশ্চিত থাকেন। এই সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টা নেবেন। আমাদের সঙ্গে পরামর্শের প্রয়োজন হলে তিনি করবেন এবং আমরা যে সিদ্ধান্ত নেবো সেখানে আমরা দৃঢ় থাকবো। আর সিদ্ধান্ত খুব দ্রুত নেওয়া হবে।
গুম কমিশন হচ্ছে না, দায়িত্ব পালন করবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন: আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা আলাদা করে গুম কমিশন করবো না, মানবাধিকার কমিশন ওই দায়িত্ব পালন করবে, সেই বিধান আইনে রাখা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা এ তথ্য জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ -এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের একটা মানবাধিকার কমিশন ছিল। এটা খুব দন্তহীন একটা প্রতিষ্ঠান ছিল এবং সেখানে গুরুতর কিছু সমস্যা ছিল। কমিশনে নিয়োগের যে পদ্ধতি, সেটার মধ্যে ত্রুটি ছিল। কমিশনের যে এখতিয়ার, সেখানে মারাত্মক ঘাটতি ছিল। তিনি বলেন, এছাড়া সেখানে এমন সব লোক বসানো হয়েছিল, তারা তাদের আইনগত এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারেননি বা করেননি। আমরা এই অধ্যাদেশকে অনেক বেশি শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছি। মানবাধিকার কমিশন যাতে সত্যিকারের এখতিইয়ার-সম্পন্ন, ক্ষমতা-সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হয় এবং যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে ভূমিকা রাখতে পারে, সেভাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছি। আসিফ নজরুল জানান, অধ্যাদেশের কয়েকটা উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে- মানবাধিকারের সংজ্ঞা সম্প্রসারিত করে বাংলাদেশ কর্তৃক অনুসমর্থিত প্রচলিত আইন দ্বারা বলবতযোগ্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দলিলে ঘোষিত বা প্রথাগত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন দ্বারা স্বীকৃত মানবাধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের সংবিধানে যে মৌলিক অধিকার আছে, তার বাইরেও বাংলাদেশ যেসব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি অনুসমর্থন করেছে বা পক্ষভুক্ত হয়েছে, এমনকি আন্তর্জাতিক আইনে মানবাধিকারের যেসব ধারণা আছে, সেগুলো বলবৎ করার ক্ষেত্রেও মানবাধিকার কমিশন ভূমিকা রাখতে পারবে। আর মানবাধিকার কমিশন গঠিত হবে একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সার্বক্ষণিক সদস্য দ্বারা। প্রথমে বলা হয়েছে সাতজনের, কিন্তু আজকে সিদ্ধান্ত হয়েছে পাঁচজনের হবে। পাঁচজনই সার্বক্ষণিক থাকবেন। আর চেয়ারপারসন ও কমিশনারদের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রদান করার জন্য আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটা বাছাই কমিটি করার বিধান করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, নিয়োগ পদ্ধতি একটু বদলানো হয়েছে। একটা গণবিজ্ঞপ্তি যাবে, একইসঙ্গে কমিশনের জন্য কিছু নাম সংগ্রহ করা হবে। উচ্চ আদালতের বিচারকদের নিয়োগের মতই আইনটি করা হয়েছে। বাছাই কমিটি সাক্ষাৎকার নিয়ে নিয়োগ প্রদান করবে। আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সীমাবদ্ধতা ছিল। শৃঙ্খলা বাহিনীসহ আরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমিশনের তদন্তের এখতিয়ারের ঘাটতি ছিল। আমরা বলেছি, শৃঙ্খলাবাহিনীসহ রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় কমিশনকে তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা আইনসহ মানবাধিকার সংরক্ষণমূলক যেকোনো আইনের মূল দায়িত্ব মানবাধিকার কমিশনকে প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে। এসময় তিনি জানান, গুম সংক্রান্ত আইন আজকে চূড়ান্ত করা যায়নি। সামনের সপ্তাহে আশা করি হয়ে যাবে। আমরা আসলে আলাদা করে গুম কমিশন করবো না, মানবাধিকার কমিশন ওই দায়িত্ব পালন করবে, সেই বিধান আইনে রাখা হয়েছে।
 
                           
                           
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
                            
                       
     
                            
                        যে যাই বলুক ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে-আসিফ নজরুল
- আপলোড সময় : ৩১-১০-২০২৫ ০২:৩৩:১১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩১-১০-২০২৫ ০২:৩৩:১১ অপরাহ্ন
 
                                  
                     
                             
                            
                             কমেন্ট বক্স 
                            
 
                          
                       
                        
                                      সর্বশেষ সংবাদ
                                
                                 
  স্টাফ রিপোর্টার
 স্টাফ রিপোর্টার  
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                     
                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                